আরে বন্ধুরা! কেমন আছো সবাই? আমি জানি, তোমাদের মধ্যে অনেকেই এখন এমন এক ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছো যা তোমাদের মনকে একেবারে সতেজ করে তুলবে, জীবনের প্রতি এক নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলবে। আর যদি সেই ভ্রমণ হয় আফ্রিকার এক কোণে, যেখানে প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে, তাহলে তো আর কথাই নেই!
আমার এবারের গন্তব্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার লুকানো রত্ন, এস্ওয়াতিনি (আগে যা সোয়াজিল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল)। যখন আমি প্রথম এস্ওয়াতিনিতে সাফারির কথা শুনেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, ইসস!
যদি একবার যাওয়া যেত! আর বিশ্বাস করো, নিজের চোখে বন্যপ্রাণীদের তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে দেখার অভিজ্ঞতাটা এতটাই দারুণ ছিল যে আমি নিশ্চিত, তোমাদেরও ভীষণ ভালো লাগবে। [৩]অনেকেই হয়তো ভাবছো, এস্ওয়াতিনি?
সে আবার কোথায়? কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এখানে এমন কিছু আছে যা অন্য কোনো সাফারিতে সহজে পাবে না। এখানকার প্রকৃতি, এখানকার মানুষ, আর বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে এই যে নিবিড় যোগাযোগ, এসবই যেন এক অন্যরকম জাদু তৈরি করে। সম্প্রতি এখানকার পর্যটন শিল্পে বেশ কিছু নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আরও বেশি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগগুলো আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে। [৪, ৫]আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সকালের নরম আলোয় যখন জিপসিটা ধুলা উড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, আর হঠাৎ করেই একদল জিরাফকে দেখতে পেলাম গাছের পাতায় মুখ ডুবিয়ে আছে, তখন মনে হয়েছিল যেন কোনো ডকুমেন্টারি দেখছি। হাতির পাল যখন বিশাল শরীর নিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, কিংবা সিংহ তার রাজকীয় ভঙ্গিতে বিশ্রাম নেয় – এই দৃশ্যগুলো শুধু চোখের তৃপ্তি মেটায় না, মনের গভীরেও এক দারুণ প্রশান্তি এনে দেয়। এখানকার গাইডরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা এতটাই সাবলীলভাবে বলেন যে পুরো সাফারিটাই যেন এক শিক্ষামূলক অ্যাডভেঞ্চার হয়ে ওঠে। [২]আসলে, এস্ওয়াতিনির সাফারি শুধু বড় প্রাণী দেখাই নয়, এখানকার প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়ও মন ছুঁয়ে যায় – অচেনা পাখির ডাক, গাছের পাতার ফিসফিসানি, এমনকি সূর্যাস্তের সময় আকাশের রং বদলানোও এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেয়। আমি নিশ্চিত, তোমরাও এই নতুন ট্রেন্ডগুলো জেনে নিজেদের ভ্রমণের পরিকল্পনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবে।আর্টিকেলটি পড়ে তোমরা এস্ওয়াতিনিতে সাফারির খুঁটিনাটি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবে। চলো, এবার তাহলে এই দারুণ অ্যাডভেঞ্চার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বন্যপ্রাণীদের জাদুর জগৎ: এস্ওয়াতিনির অদেখা গল্প

সত্যি বলতে, আমি যখন এস্ওয়াতিনিতে সাফারির পরিকল্পনা করছিলাম, তখন আমার মনে নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কেমন হবে সেখানকার জঙ্গল? বন্যপ্রাণীরা কি সত্যিই আমার চোখের সামনে আসবে? কিন্তু বিশ্বাস করুন, প্রথম দিনেই যখন আমার জিপসিটা মখনি গেম রিজার্ভের (Mkhaya Game Reserve) ভেতরে ঢুকছিল, তখন আমার বুকের ভেতরটা এক অদ্ভুত আনন্দে ভরে উঠেছিল। ধূসর ধুলো উড়িয়ে আমাদের জিপসি এগিয়ে যাচ্ছিল আর হঠাৎ করেই দেখা পেলাম একদল সাদা গণ্ডারের! তাদের বিশাল শরীর আর শান্ত চলাফেরা দেখে আমি যেন মুহূর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গাইড হাসিমুখে বলছিলেন, “ম্যাডাম, শুভ সূচনা!” আর আমার তখন মনে হচ্ছিল, যেন কোনো এক জাদুর জগতে এসে পড়েছি। এখানকার প্রাণীরা এতটাই স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় যে তাদের দেখে মনে হয় তারা জানে এটাই তাদের রাজ্য, আর আমরা কেবল তাদের রাজত্বের অতিথি। আমি নিজেও প্রকৃতির এই বিশালতার সামনে নিজেকে খুবই ছোট মনে করছিলাম, কিন্তু সেই ছোটত্বের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল এক অপার শান্তি আর আনন্দ। আমার মনে হয়েছিল, শহুরে কোলাহল থেকে দূরে এসে প্রকৃতির এই আসল রূপে নিজেকে সঁপে দেওয়াই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখানকার বাতাসেই যেন মিশে আছে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ, যা আপনাকে বারবার মুগ্ধ করবেই।
গণ্ডার থেকে হাতি: রাজকীয় দর্শন
মখনি গেম রিজার্ভে গণ্ডার দেখাটা আমার কাছে ছিল এক স্বপ্নপূরণের মতো। গাইড আমাদের জিপসি থামিয়ে খুব নিচু স্বরে বলেছিলেন, “দেখুন, ওখানে কী আছে!” আমি দূরবীন হাতে নিয়ে দেখলাম, মা ও তার শাবক মিলে ঘাস খাচ্ছে। এমন দৃশ্য টেলিভিশনে দেখেছি বহুবার, কিন্তু নিজের চোখে এত কাছ থেকে দেখাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অনুভূতি। তাদের চামড়ার ভাঁজ, কানের নড়াচড়া – সবকিছুই এত স্পষ্ট ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলব। শুধু গণ্ডারই নয়, লেবুওয়া (Hlane Royal National Park) ন্যাশনাল পার্কে হাতির পালের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়াটাও ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা। এক বিশাল দল, যার মধ্যে ছিল ছোট ছোট হাতির বাচ্চাও, তারা ধীরে ধীরে জল পান করছিল। এখানকার হাতির সংখ্যা বেশ ভালো, আর তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো রাজকীয় পরিবার তাদের নিজস্ব মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি নিশ্চিত, এই দৃশ্যগুলো আপনার মনেও গভীর ছাপ ফেলবে, ঠিক যেমনটা আমার ফেলেছিল। এখানকার গাইডরা শুধু প্রাণী চেনাতেই পারদর্শী নন, তারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এস্ওয়াতিনির ভূমিকার কথাও এমনভাবে বলেন যে আপনিও তাদের এই উদ্যোগে শামিল হতে চাইবেন।
রাতজাগা বন্যপ্রাণী: এক অন্যরকম সাফারি
দিনের আলোর সাফারি তো অনেকেই করে, কিন্তু এস্ওয়াতিনিতে রাতের সাফারি আমার কাছে ছিল এক নতুন আবিষ্কার! রাতের আঁধারে জিপসির হেডলাইটের আলোয় যখন বন্যপ্রাণীদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠছিল, তখন সত্যিই একটা অন্যরকম রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম। লেবুওয়াতে একবার রাতের সাফারিতে বেরিয়েছিলাম, তখন দেখলাম একদল হাইনা (hyena) শিকারের খোঁজে বের হয়েছে। তাদের অদ্ভুত ডাক আর শিকারের কৌশল আমাকে বেশ অবাক করেছিল। দিনের বেলায় যে প্রাণীরা লুকিয়ে থাকে বা অলসভাবে বিশ্রাম নেয়, রাতে তারাই যেন আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই অভিজ্ঞতাটা এতটাই আলাদা ছিল যে আমার মনে হয়েছে, এস্ওয়াতিনিতে এলে রাতের সাফারিটা মিস করা একেবারেই বোকামি হবে। এই অভিজ্ঞতাটা আপনাকে বন্যপ্রাণীদের জীবনচক্রের এক অন্য দিক দেখাবে, যা দিনের বেলায় সহজে দেখা যায় না। এখানকার স্থানীয় গাইডরা রাতের বেলাও অত্যন্ত সতর্ক থাকেন এবং তাদের চোখ যেন অন্ধকারেও সবকিছু দেখতে পায়। তাদের গল্প শুনতে শুনতে কখন যে রাত ফুরিয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না!
সাফারি অ্যাডভেঞ্চার: আমার দেখা সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো
এস্ওয়াতিনির সাফারি শুধু বড় বড় প্রাণীদের দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখানকার প্রতিটি মুহূর্তই যেন এক একটা ছোট অ্যাডভেঞ্চার। আমার মনে আছে, একবার যখন মালোলোতজা নেচার রিজার্ভের (Malolotja Nature Reserve) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম একদল জেব্রা ঘাস খাচ্ছে। হঠাৎ করেই একটি ছোট জেব্রা বাচ্চা লাফিয়ে উঠল আর তার মা তাকে আদর করতে লাগল। এই ছোট ছোট দৃশ্যগুলো আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির সৌন্দর্য কত সূক্ষ্ম আর স্পর্শকাতর হতে পারে। এখানকার জলবায়ু, মাটির রং, গাছপালার বৈচিত্র্য – সবকিছুই যেন এক ভিন্ন ছবি তৈরি করে। আমি আমার ক্যামেরায় যতগুলো ছবি তুলেছি, তার চেয়ে বেশি ছবি জমা হয়েছে আমার মনের ফাইলে। এখানকার প্রতিটি পথের বাঁকে যেন নতুন কোনো বিস্ময় অপেক্ষা করে থাকে। বিশেষ করে যখন আপনি নিজের গাড়ির জানালা খুলে বাতাস অনুভব করবেন আর কানে আসবে পাখির কিচিরমিচির শব্দ, তখন মনে হবে এইতো জীবন! এই কারণেই তো আমরা ঘর ছেড়ে এত দূরে আসি, এমন এক অন্যরকম অনুভূতির খোঁজে।
অচেনা পাখির ডাকে ভোর: নতুন এক সুর
এস্ওয়াতিনিতে আমার প্রতিটি সকাল শুরু হয়েছে অচেনা পাখির ডাকে। হোটেলের জানালা খুলতেই শুনতে পেতাম নানা রকম পাখির কিচিরমিচির শব্দ, যা আমার শহুরে জীবনে সচরাচর শোনা যায় না। আমার মনে আছে, লেবুওয়ায় একবার ভোরবেলা যখন জিপসি নিয়ে বেরিয়েছিলাম, তখন দেখলাম এক বিশাল ওক গাছের ডালে একটি ফিশ ইগল (Fish Eagle) বসে আছে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর বিশাল ডানা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। গাইড বলেছিলেন, এই পাখিটি এস্ওয়াতিনির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী। এখানকার পাখি জগৎ এতটাই সমৃদ্ধ যে শুধু পাখির ছবি তোলার জন্য অনেক পর্যটক এখানে আসেন। আমি নিজেও তখন পাখির ডাক রেকর্ড করছিলাম, যা এখনো শুনলে মনে হয় যেন এস্ওয়াতিনির জঙ্গলের মধ্যেই আছি। এই অনুভূতিটা সত্যিই অসাধারণ, বিশেষ করে যখন আপনি প্রকৃতির সঙ্গে একেবারে একাত্ম হয়ে যান। এখানকার গাইডরা বিভিন্ন পাখির ডাক চিনতে এবং তাদের সম্পর্কে দারুণ সব তথ্য দিতে পারেন, যা আপনার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
সূর্যাস্তের মায়াবী রং: ক্যামেরায় ধরা মুহূর্ত
সাফারির দিনের শেষে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখাটা আমার কাছে ছিল এক মায়াবী অভিজ্ঞতা। এস্ওয়াতিনির আকাশে সূর্যাস্তের সময় যে রং খেলা করে, তা দেখে মনে হয় যেন কোনো শিল্পী তার সবটুকু রং ঢেলে দিয়েছে। কমলা, লাল, বেগুনি – এই রংগুলোর মিশ্রণ এমন এক ছবি তৈরি করে যা ভোলার নয়। আমি যখন ইয়ালাওয়ানে (Hlane Royal National Park) বসে সূর্যাস্তের ছবি তুলছিলাম, তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একদল জিরাফ। তাদের লম্বা ছায়া আর সূর্যাস্তের আলো মিলেমিশে এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করেছিল। আমার মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তটি চিরকাল আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। সূর্যাস্তের সময় আকাশটা যখন ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসে, তখন বন্যপ্রাণীদের silhouette গুলো এক অন্যরকম সৌন্দর্য তৈরি করে। এই দৃশ্যগুলো শুধু ছবি তোলার জন্য নয়, বরং নিজের মনের ক্যামেরায় ধারণ করার জন্য। এখানকার শান্ত পরিবেশ আর প্রকৃতির এই দারুণ রংবাজি আপনার মনকে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেবে।
এস্ওয়াতিনিতে পর্যটন: একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি
এস্ওয়াতিনি এখন শুধু ঐতিহ্যবাহী সাফারি গন্তব্য নয়, বরং পর্যটন শিল্পে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ্য হলো পর্যটকদের এমন এক অভিজ্ঞতা দেওয়া যা শুধু বিনোদনমূলক নয়, বরং শিক্ষামূলক এবং পরিবেশবান্ধবও। আমি যখন বিভিন্ন রিজার্ভে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, তখন দেখলাম তাদের পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি কত গভীর মনোযোগ। তারা শুধু বন্যপ্রাণীকেই রক্ষা করছে না, বরং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যও নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। আমি একবার স্থানীয় একটি গ্রামে গিয়েছিলাম, যেখানে তাদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম। এখানকার মানুষজন এতটাই অতিথিপরায়ণ যে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কখন যে সময় কেটে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। তাদের সরল জীবনযাপন আর প্রকৃতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। আমার মনে হয়েছিল, এই ধরনের উদ্যোগগুলো এস্ওয়াতিনিকে অন্যান্য সাফারি গন্তব্য থেকে আলাদা করে তুলেছে। এই কারণেই এখানকার পর্যটন এখন একটি নতুন ট্রেন্ড তৈরি করছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে।
পরিবেশবান্ধব সাফারি: প্রকৃতির প্রতি সম্মান
এস্ওয়াতিনির পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছে। এখানকার সাফারিগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে পরিবেশের উপর ন্যূনতম প্রভাব পড়ে। আমি দেখেছি, পর্যটকদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। মখনি গেম রিজার্ভে থাকার সময় আমি তাদের সোলার পাওয়ার সিস্টেম এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখেছিলাম। তাদের প্রতিটি ছোট ছোট উদ্যোগই যেন প্রকৃতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো শুধু প্রকৃতিকেই রক্ষা করছে না, বরং পর্যটকদের মধ্যেও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। আমার মনে হয়েছিল, আমাদের প্রত্যেকেরই এমন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করা উচিত। এই ধরনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুধু আনন্দই দেয় না, বরং আপনাকে আরও বেশি সচেতন এবং দায়িত্বশীল করে তোলে। এখানকার গাইডরাও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে পর্যটকদের খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন।
স্থানীয় সংস্কৃতিতে মিশে যাওয়া: এক আন্তরিক অভিজ্ঞতা
সাফারি ভ্রমণের পাশাপাশি এস্ওয়াতিনির স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়াটা আমার কাছে ছিল এক দারুণ প্রাপ্তি। আমি একটি সোয়াজি গ্রামে গিয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান এবং গল্প শুনেছিলাম। এখানকার মানুষজন তাদের সংস্কৃতিকে এতটা ভালোবাসে এবং গর্বের সঙ্গে তা উপস্থাপন করে যে আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে নাচের সুযোগও দিয়েছিল। এই অভিজ্ঞতাটা এতটাই আন্তরিক ছিল যে আমার মনে হয়েছে, শুধু বন্যপ্রাণী দেখাই নয়, এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়াটাও এস্ওয়াতিনি ভ্রমণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের হাসি, তাদের সরলতা – সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া আপনাকে সেই দেশের সংস্কৃতির গভীরে নিয়ে যায় এবং এক সত্যিকারের উপলব্ধি এনে দেয়। এখানকার হস্তশিল্পের কাজগুলোও বেশ সুন্দর, যা আপনি স্মারক হিসেবে কিনতে পারেন।
প্রস্তুতি পর্ব: এস্ওয়াতিনিতে সাফারির আগে যা জানা জরুরি
যেকোনো ভ্রমণের আগে প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর এস্ওয়াতিনির মতো একটা নতুন গন্তব্যে যাওয়ার আগে তো আরও বেশি। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কিছু ছোটখাটো বিষয় যদি আগে থেকে জানা থাকে, তাহলে আপনার ভ্রমণটা আরও অনেক বেশি মসৃণ এবং উপভোগ্য হয়ে ওঠে। প্রথমত, ভিসার ব্যাপারটা ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, কোন সময়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হবে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আমার মনে আছে, আমি যাওয়ার আগে এখানকার আবহাওয়া, নিরাপত্তা এবং স্থানীয় কিছু নিয়মকানুন সম্পর্কে বেশ ভালো করে খোঁজ নিয়েছিলাম। ইন্টারনেটে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, তবে স্থানীয় ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বললে আরও বিস্তারিত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাজেস্ট করব, ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স করে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। আমার মনে আছে, একবার আমার লাগেজ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল, তখন ইন্স্যুরেন্সটা খুব কাজে দিয়েছিল। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনার এস্ওয়াতিনি ভ্রমণ নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না, বরং আপনি শুধু ভ্রমণের আনন্দটাই উপভোগ করতে পারবেন।
ভিসা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: যা না হলেই নয়
এস্ওয়াতিনিতে ভ্রমণের জন্য ভিসা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার দেশের নাগরিক হিসেবে আমাকে আগে থেকেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়েছিল। আমি সাজেস্ট করব, ভ্রমণের অনেক আগেই ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত, কারণ অনেক সময় এতে বেশ কিছু দিন সময় লাগতে পারে। শুধু ভিসা নয়, আপনার পাসপোর্ট যেন অন্তত ছয় মাস মেয়াদী থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া, আপনার বিমানের টিকিট, হোটেলের বুকিং কনফার্মেশন এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত কিছু কাগজপত্রও সঙ্গে রাখা ভালো। আমি যখন ইমিগ্রেশনে এসেছিলাম, তখন তারা আমার সব কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিল। সব ঠিকঠাক থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। এছাড়াও, হলুদ জ্বর (Yellow Fever) প্রতিরোধের টিকা নেওয়া থাকলে তার প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখা আবশ্যক, কারণ কিছু দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো অনেক সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সাফারির সেরা সময়: কখন যাবেন?
এস্ওয়াতিনিতে সাফারির জন্য সেরা সময় হলো শুষ্ক মৌসুম, যা সাধারণত মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই সময়ে আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক থাকে এবং বন্যপ্রাণীদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। কারণ এই সময়ে জল কমে যাওয়ায় প্রাণীরা জলের উৎসের কাছাকাছি চলে আসে, ফলে তাদের সহজে দেখা যায়। আমি যখন জুলাই মাসে গিয়েছিলাম, তখন বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে যদি আপনি পাখি দেখতে ভালোবাসেন, তাহলে ভেজা মৌসুমও ভালো হতে পারে, কারণ এই সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। এখানকার আবহাওয়া কিছুটা অনিশ্চিত হতে পারে, তাই দিনের বেলা গরম থাকলেও রাতে বেশ ঠান্ডা পড়তে পারে। সে অনুযায়ী পোশাক সাথে রাখা ভালো। আমি সবসময় ঋতু অনুযায়ী পোশাক সাথে নিয়ে যাই, এতে যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। এখানে একটি ছোট্ট টেবিল দিয়ে দিচ্ছি, যা আপনাকে আপনার ভ্রমণের সেরা সময় বেছে নিতে সাহায্য করবে।
| সময়কাল | আবহাওয়া | বন্যপ্রাণী দর্শন | বিশেষ টিপস |
|---|---|---|---|
| মে – অক্টোবর (শুষ্ক মৌসুম) | ঠান্ডা থেকে হালকা গরম, শুষ্ক | বন্যপ্রাণী দেখার জন্য সেরা সময়, জলের উৎসের কাছে দেখা যায় | দিনের বেলা গরম কাপড়, রাতে জ্যাকেট প্রয়োজন হতে পারে |
| নভেম্বর – এপ্রিল (ভেজা মৌসুম) | গরম ও আর্দ্র, মাঝে মাঝে বৃষ্টি | পাখি দেখার জন্য ভালো, সবুজ প্রকৃতি | বৃষ্টির জন্য ছাতা বা রেইনকোট, মশার উপদ্রব বেশি থাকতে পারে |
সাফারি টিপস: কীভাবে আপনার এস্ওয়াতিনি ভ্রমণকে সেরা করে তুলবেন

এস্ওয়াতিনিতে আপনার সাফারি অভিজ্ঞতাকে আরও অসাধারণ করে তোলার জন্য আমার কিছু ব্যক্তিগত টিপস আছে। আমি যখন প্রথমবার গিয়েছিলাম, তখন কিছু জিনিস বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল। এখন আমি সেগুলো তোমাদের সাথে শেয়ার করছি, যাতে তোমরা আমার মতো ভুল না করো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরা। দিনের বেলায় টি-শার্ট আর শর্টস চললেও, সকাল বা সন্ধ্যায় যখন জিপসিতে থাকবেন, তখন হালকা জ্যাকেট বা সোয়েটার খুবই কাজে দেবে, কারণ আবহাওয়া হঠাৎ করেই ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। আর সবচেয়ে জরুরি হলো, একটি ভালো দূরবীন এবং ক্যামেরা সাথে রাখা। অনেক সময় বন্যপ্রাণীরা বেশ দূরে থাকে, তখন দূরবীন ছাড়া তাদের ভালোভাবে দেখা যায় না। আর এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এত অসাধারণ যে ভালো ক্যামেরা না থাকলে আফসোস হবেই! আমি নিজের সাথে একটি শক্তিশালী পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গিয়েছিলাম, যা আমাকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যামেরা আর ফোন চার্জ করতে সাহায্য করেছিল। এইসব ছোট ছোট প্রস্তুতি আপনার ভ্রমণকে আরও অনেক বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
পোশাক ও সরঞ্জাম: আরাম আর নিরাপত্তার জন্য
সাফারিতে যাওয়ার সময় পোশাকের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। আমি সবসময় হালকা রঙের পোশাক পরি, কারণ গাঢ় রঙ অনেক সময় পোকা মাকড়কে আকর্ষণ করে। লম্বা হাতার শার্ট এবং প্যান্ট পরা ভালো, বিশেষ করে যখন ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটবেন। এটি শুধু পোকামাকড় থেকেই নয়, সূর্যের তীব্র আলো থেকেও ত্বককে রক্ষা করবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আরামদায়ক জুতো! অনেক সময় আপনাকে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে হতে পারে, তাই স্যান্ডেল বা স্লিপার নয়, বরং বন্ধ জুতো পরা উচিত। আমি নিজের সাথে একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট নিয়ে গিয়েছিলাম, যেখানে সাধারণ ব্যান্ডেজ, ব্যথানাশক এবং মশার স্প্রে ছিল। ভাগ্যক্রমে আমার এগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু বিপদের সময় এটি খুবই কাজে আসতে পারে। একটি টুপি এবং সানগ্লাসও অবশ্যই সাথে নেবেন, যা সূর্যের তীব্র রশ্মি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। মনে রাখবেন, আরামদায়ক পোশাক এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আপনার সাফারি অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
ছবি তোলার টিপস: স্মৃতির ফ্রেমবন্দী
এস্ওয়াতিনির মতো সুন্দর জায়গায় গেলে ছবি তোলাটা তো মাস্ট! আমি ব্যক্তিগতভাবে ফটোগ্রাফি খুব পছন্দ করি, তাই সাফারিতে যাওয়ার আগে ক্যামেরা নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করেছিলাম। আমার প্রথম টিপস হলো, একটি ভালো জুম লেন্স সাথে রাখা। কারণ অনেক সময় প্রাণীরা দূরে থাকে এবং ভালো জুম লেন্স ছাড়া তাদের স্পষ্ট ছবি তোলা সম্ভব নয়। এছাড়াও, ক্যামেরার অতিরিক্ত ব্যাটারি এবং মেমরি কার্ড নিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি চান না যে ছবি তোলার মাঝখানে ব্যাটারি শেষ হয়ে যাক! সকালের নরম আলো বা সূর্যাস্তের সময় ছবি তোলার জন্য সেরা, কারণ এই সময়ে আলো খুব সুন্দর থাকে। বন্যপ্রাণীদের ছবি তোলার সময় ধৈর্য ধরাটা খুব জরুরি। অনেক সময় আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হতে পারে একটি ভালো শটের জন্য। আর অবশ্যই, স্থানীয় গাইডের পরামর্শ মেনে চলুন, কারণ তারা জানেন কখন এবং কিভাবে সেরা ছবি তোলা যায়। আমি একবার গাইডের পরামর্শে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটি দারুণ সিংহের ছবি তুলেছিলাম, যা আমার কাছে এখনো খুব প্রিয়।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ: এস্ওয়াতিনির সদিচ্ছা
এস্ওয়াতিনিতে এসে একটি জিনিস আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, তা হলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তাদের সদিচ্ছা এবং নিরলস প্রচেষ্টা। এখানকার মানুষজন এবং সরকার বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমি মখনি গেম রিজার্ভে যখন গাইডদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন তারা গর্বের সাথে বলছিলেন কীভাবে তারা চোরাশিকারিদের হাত থেকে গণ্ডারদের রক্ষা করছেন এবং তাদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা শুধু বন্যপ্রাণীদের জন্যই নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও। আমার মনে হয়েছিল, এই ছোট দেশটি দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে প্রকৃতি এবং মানুষ একসঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগগুলো বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি দারুণ উদাহরণ তৈরি করছে। এখানকার কর্মীরা এতটাই নিবেদিতপ্রাণ যে তাদের দেখলে সত্যিই অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। তারা শুধু কাজই করেন না, বরং প্রাণীদের প্রতি তাদের ভালোবাসাটা স্পষ্ট।
সাদা গণ্ডারদের রক্ষা: এক সফল গল্প
এস্ওয়াতিনিতে সাদা গণ্ডার সংরক্ষণের গল্পটা আমার কাছে ছিল এক দারুণ অনুপ্রেরণা। একসময় চোরাশিকারের কারণে তাদের সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছিল যে তারা প্রায় বিলুপ্তির মুখে ছিল। কিন্তু এখানকার সংরক্ষণবাদীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ তাদের সংখ্যা আবার বাড়ছে। আমি যখন মখনি গেম রিজার্ভে সাদা গণ্ডার দেখেছিলাম, তখন গাইড আমাকে তাদের সংরক্ষণের ইতিহাস বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, কীভাবে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে এই প্রাণীদের পাহারা দেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। তাদের এই কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা এই বিশাল প্রাণীদের দেখতে পাচ্ছি। এটা শুধু এস্ওয়াতিনির জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি সফলতার গল্প। আমার মনে হয়েছিল, এই ধরনের কাজগুলো প্রচার হওয়া উচিত, যাতে আরও বেশি মানুষ এই উদ্যোগগুলোর সাথে পরিচিত হয় এবং এর পেছনে থাকা মানুষের ত্যাগ ও পরিশ্রম সম্পর্কে জানতে পারে। এই সফল গল্পটি আমাকে শিখিয়েছে যে, সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।
সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ: স্থানীয়দের ভূমিকা
এস্ওয়াতিনিতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন একটি গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম সেখানকার মানুষজনও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিভিন্নভাবে জড়িত। তারা শুধু পর্যটকদের গাইড হিসেবেই কাজ করে না, বরং বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষায় নজরদারিও করে। তাদের বিশ্বাস, বন্যপ্রাণী তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কারণেই তারা বন্যপ্রাণীদের প্রতি এতটাই সহানুভূতিশীল। আমার মনে হয়েছিল, যখন স্থানীয় মানুষজন কোনো সংরক্ষণ উদ্যোগে সরাসরি যুক্ত হয়, তখন সেই উদ্যোগ আরও বেশি সফল হয়। এস্ওয়াতিনি এই মডেলটি খুব সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে, যা বিশ্বব্যাপী একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হতে পারে। এই ধরনের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুধু প্রাণীদেরই বাঁচায় না, বরং স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও সাহায্য করে। স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা না থাকলে এত বড় স্কেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।
আমার ক্যামেরায় ধরা পড়া এস্ওয়াতিনির মুহূর্ত
আমার এস্ওয়াতিনি ভ্রমণের সময় আমার ক্যামেরাটা ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করেছি, যাতে পরে ফিরে এসে সেই স্মৃতিগুলো আবার তাজা করতে পারি। এখানকার ল্যান্ডস্কেপ এত সুন্দর যে, যখনই জিপসিটা কোনো মোড়ে ঘুরেছে, তখনই নতুন এক দৃশ্য আমার চোখের সামনে এসেছে। সবুজ পাহাড়, বিশাল আকাশ, আর তার নিচে ঘুরে বেড়ানো বন্যপ্রাণী – সবকিছুই যেন এক অসাধারণ ছবি তৈরি করে। আমি আমার ক্যামেরায় হাতির পালের ছবি তুলেছি, জিরাফের গ্রেসফুল ভঙ্গিমা ফ্রেমবন্দী করেছি, এমনকি সূর্যাস্তের সময় আকাশের রঙের খেলাও ধরে রেখেছি। প্রতিটি ছবিই যেন একটি গল্প বলছে, আর সেই গল্পগুলো আমার মনের গভীরে গেঁথে আছে। যখন আমি এই ছবিগুলো দেখি, তখন মনে হয় যেন আমি আবার সেই বন্য প্রকৃতির মাঝে ফিরে গেছি। এই ছবিগুলো শুধু আমার স্মৃতি নয়, বরং আমার এস্ওয়াতিনি সফরের এক জীবন্ত দলিল। আমি মনে করি, প্রত্যেকেরই তাদের ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখা উচিত, কারণ এই স্মৃতিগুলোই আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
সাফারি ভ্লগিং: আমার অ্যাডভেঞ্চারের গল্প
আমি আমার এস্ওয়াতিনি সাফারির উপর একটি ছোট্ট ভ্লগও বানিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, শুধু ছবি নয়, ভিডিওর মাধ্যমে এই অ্যাডভেঞ্চারটা আরও ভালোভাবে দেখানো সম্ভব। আমি যখন জিপসিতে ছিলাম, তখন প্রায়ই ছোট ছোট ক্লিপ রেকর্ড করতাম – হাতির গর্জন, পাখির ডাক, এমনকি আমাদের গাইডের মজার গল্পগুলোও। ভ্লগিংয়ের মাধ্যমে আমি আমার অনুভূতিগুলো আরও ভালোভাবে প্রকাশ করতে পেরেছি। বন্ধুদের সাথে যখন আমার ভ্লগ শেয়ার করেছি, তখন অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল এস্ওয়াতিনির সৌন্দর্য দেখে। অনেকে তো তখনই পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিল সেখানে যাওয়ার। আমার মনে হয়েছিল, এই ধরনের ভ্লগিং নতুন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে এবং তাদের এস্ওয়াতিনি সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা দিতে পারে। আমি নিশ্চিত, তোমরাও যদি এমন কোনো ভ্রমণের ভ্লগ তৈরি করো, তাহলে তোমাদের অভিজ্ঞতাটা আরও বেশি মজাদার হয়ে উঠবে। এই ভ্লগগুলি কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, বরং অন্যদের জন্য একটি পথের দিশাও বটে।
স্মারক সংগ্রহ: এস্ওয়াতিনির ছোঁয়া
ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখার আরেকটি উপায় হলো স্মারক সংগ্রহ করা। আমি এস্ওয়াতিনি থেকে কিছু স্থানীয় হস্তশিল্পের জিনিস কিনেছিলাম, যা আমার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে খুব সুন্দর কাঠের কাজ, পুঁতির গয়না এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাওয়া যায়। আমি একটি ছোট্ট কাঠের হাতি কিনেছিলাম, যা এখন আমার ডেস্কে রাখা আছে। যখনই আমি ওটার দিকে তাকাই, তখনই আমার এস্ওয়াতিনির কথা মনে পড়ে। স্মারকগুলো শুধু জিনিসপত্র নয়, বরং প্রতিটি স্মারকের পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি গল্প, একটি স্মৃতি। এগুলো আমাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি স্মরণীয় করে তোলে। আমি সাজেস্ট করব, তোমরাও তোমাদের ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু স্মারক সংগ্রহ করো। এটি তোমাকে তোমার প্রিয় গন্তব্যের কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করবে এবং অন্যদের সাথে তোমার গল্প শেয়ার করার একটি সুযোগও করে দেবে। এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই যেন বড় বড় স্মৃতির প্রতিচ্ছবি।
글কে বিদায়
সত্যি বলতে, এস্ওয়াতিনিতে আমার এই বন্যপ্রাণী সাফারির অভিজ্ঞতা কেবল একটি ভ্রমণ ছিল না, এটি ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা অধ্যায়। এখানকার প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী আর মানুষজন এতটাই আন্তরিক যে ফিরে এসেও আমি সেই স্মৃতিগুলো ভুলতে পারছি না। আমি নিশ্চিত, যারা একবার এস্ওয়াতিনিতে আসবেন, তারা আমার মতোই মুগ্ধ হবেন। এই ছোট্ট দেশটি তার অসামান্য বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে যে জাদু তৈরি করেছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। আশা করি, আমার এই অভিজ্ঞতা তোমাদেরও এস্ওয়াতিনিতে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
জেনে রাখা ভালো কিছু তথ্য
১. ভিসার জন্য আগে থেকে আবেদন করুন: ভ্রমণের অন্তত কয়েক সপ্তাহ আগে ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ। এটি আপনাকে শেষ মুহূর্তের ঝামেলা থেকে বাঁচাবে।
২. সেরা সময় বেছে নিন: বন্যপ্রাণী দেখার জন্য মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়টা সবচেয়ে ভালো, কারণ এই সময়ে প্রাণীরা জলের উৎসের কাছে চলে আসে।
৩. সঠিক পোশাক ও সরঞ্জাম: হালকা ও আরামদায়ক পোশাক, লম্বা হাতার শার্ট, প্যান্ট, আরামদায়ক জুতো, টুপি, সানগ্লাস এবং মশার স্প্রে অবশ্যই সাথে রাখুন।
৪. জরুরি ওষুধপত্র: সাধারণ ব্যথানাশক, ব্যান্ডেজ এবং আপনার নিয়মিত প্রয়োজনীয় যেকোনো ওষুধ সাথে রাখুন। ফার্স্ট এইড কিট সাথে থাকা ভালো।
৫. ক্যামেরা ও পাওয়ার ব্যাংক: এখানকার অসাধারণ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার জন্য ভালো ক্যামেরা, অতিরিক্ত ব্যাটারি, মেমরি কার্ড এবং একটি শক্তিশালী পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যান।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
এস্ওয়াতিনিতে বন্যপ্রাণী সাফারি কেবল চোখের দেখাই নয়, বরং এটি এক গভীর উপলব্ধি। এখানকার সংরক্ষণ উদ্যোগগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত এবং স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা এই উদ্যোগগুলোকে আরও বেশি সফল করে তুলেছে। প্রকৃতির প্রতি তাদের সম্মান এবং বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষায় তাদের নিরলস প্রচেষ্টা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখানকার প্রতিটি মুহূর্তই ছিল অ্যাডভেঞ্চার আর শিক্ষায় ভরপুর। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, এই ভ্রমণ তোমাদের কেবল আনন্দই দেবে না, বরং পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও সমৃদ্ধ করবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: এস্ওয়াতিনিতে সাফারির মূল আকর্ষণ কী এবং কেন এটি অন্যান্য আফ্রিকান সাফারির চেয়ে আলাদা?
উ: এস্ওয়াতিনির সাফারি সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা, আর আমি নিজে এটা অনুভব করে তোমাদের বলতে পারি, এর মূল আকর্ষণ হলো প্রকৃতির সঙ্গে এক নিবিড় ও ব্যক্তিগত সংযোগের সুযোগ। এখানে শুধু বড় প্রাণী দেখাই মুখ্য নয়, বরং পুরো পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়াটাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানকার অনেক রিজার্ভেই দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো করে ঘোরাঘুরি করতে পারেন, এমনকি গাইড ছাড়াই!
[২] চিন্তা করো তো, নিজের বাইকে করে ঘুরতে ঘুরতে জেব্রা বা বুশবাকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, অথবা জিরাফ দেখতে দেখতে বুশ বারবিকিউতে বসে পড়লে! এটা এমন এক স্বাধীনতা, যা পৃথিবীর খুব কম জায়গাতেই পাওয়া যায়। [২] এস্ওয়াতিনি ‘বিগ ফাইভ’ (সিংহ, হাতি, গণ্ডার, চিতাবাঘ, মোষ) এর জন্যও পরিচিত, বিশেষ করে হ্লানে রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক এবং মকায়া গেম রিজার্ভে সিংহ এবং হাতি দেখা যায়, আর ব্ল্যাক ও হোয়াইট গণ্ডার উভয়ই এই দুই জায়গাতেই আছে। [২] আমার কাছে যা সবচেয়ে ভালো লেগেছে, তা হলো পায়ে হেঁটে গণ্ডার ট্র্যাকিং করার সুযোগ, এটা এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা!
[২] এছাড়াও, এখানকার পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগগুলো আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে।
প্র: এস্ওয়াতিনিতে সাফারি করার জন্য সেরা সময় কোনটি এবং সেখানে কি কি ধরনের বন্যপ্রাণী দেখা যায়?
উ: আমার অভিজ্ঞতা বলে, এস্ওয়াতিনিতে সাফারি করার জন্য শুষ্ক মৌসুম (মে থেকে অক্টোবর) সবচেয়ে ভালো। এই সময়ে তাপমাত্রা আরামদায়ক থাকে এবং গাছপালা কম থাকায় বন্যপ্রাণীদের দেখতে সুবিধা হয়, কারণ তারা পানির উৎসের আশেপাশে জড়ো হয়। আর এখানকার বন্যপ্রাণীর কথা কী বলবো!
এস্ওয়াতিনিতে প্রায় ১৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই এখানকার গেম পার্ক ও নেচার রিজার্ভগুলোতে সুরক্ষিত। [২] আমার দেখা প্রাণীদের মধ্যে গণ্ডার, জিরাফ, জলহস্তি এবং হাতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। [২] এছাড়া, বেশ কিছু শিকারী প্রাণী এবং অসংখ্য অ্যান্টিলোপ ও ছোট স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপও দেখা যায়। [২] আমি নিশ্চিত, তোমরাও এখানকার বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী দেখে মুগ্ধ হবে। শুধু বড় প্রাণীই নয়, এখানকার পাখি দেখার অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। এখানকার বিভিন্ন আবাসস্থলে ক্রুগার পার্কের মতোই প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। [২]
প্র: এস্ওয়াতিনিতে সাফারির সময় থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য কার্যকলাপের সুযোগ কেমন?
উ: এস্ওয়াতিনিতে সাফারির সময় থাকার ব্যবস্থার অনেক বৈচিত্র্য আছে, যা বিভিন্ন রুচি ও বাজেটকে পূরণ করতে পারে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এখানে এমন সব স্ব-রান্নার (self-catering) বিকল্প রয়েছে, যা তোমাকে বুশের মধ্যে নিজের একটি ‘সাফারি লজ’-এর দায়িত্বে থাকার সুযোগ দেবে। [২] মানে, তুমি নিজের মতো করে থাকার জায়গা বেছে নিতে পারবে এবং সেখানকার প্রকৃতির মধ্যে নিজস্ব অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারবে। এছাড়াও, ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান বিগ গেম দেখার জন্য হ্লানে রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক এবং মকায়া গেম রিজার্ভের মতো জায়গাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আবাসন ব্যবস্থা আছে। [২] শুধু গেম ড্রাইভই নয়, এখানে ঘোড়ায় চড়ে, মাউন্টেন বাইকে অথবা হেঁটে সাফারি করারও সুযোগ আছে, যা তোমাকে বন্যপ্রাণীদের আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দেবে। [২] ব্যক্তিগতভাবে, আমি হেঁটে গণ্ডার ট্র্যাকিং করে যে অ্যাডভেঞ্চার পেয়েছি, তা ভোলার নয়। এই সব কার্যকলাপই এস্ওয়াতিনিতে তোমার ভ্রমণকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ এবং স্মরণীয় করে তুলবে।






